“মা-মেয়ে একসঙ্গে কান্না করি”

জীবন যে কত কষ্টে সেটা মাত্র সাত বছরেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে শিশু সুমাইয়া। সহপাঠীরা যখন সারাদিন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে তখন সুমাইয়ার দিনগুলো কাটছে বিছানায় শুয়ে। একের পর এক অসুখে তার স্বপ্নগুলো আজ অভিশপ্ত হয়ে পড়ছে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় ইতোমধ্যে সোমাইয়ার চিকিৎসা করাতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে তার পরিবার। এখন বিনা চিকিৎসায় সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া যেন আর কোনো পথই খোলা নেই তাদের।

সোমাইয়া গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের শিমলাপাড়া গ্রামের কাঠমিস্ত্রি স্বপন মিয়া ও সানজিদা খাতুন দম্পতির মেয়ে। সে শিমলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। শারীরিক অসুস্থতায় ছয় মাস ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ রয়েছে তার।

সোমাইয়ার বাবা স্বপন মিয়া জানান, গত নয় মাস আগে সোমাইয়ার পেটে ব্যথা হয়। প্রথমে তাকে মাওনা চৌরাস্তার হাসপাতালে চিকিৎসা করালে পেটে টিউমার আছে বলে নিশ্চিত করে চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিলে ময়মনসিংহের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে টিউমারসহ একটি কিডনি অপসারণ করেন চিকিৎসক। মেয়ের চিকিৎসা খরচ করতে গিয়ে পরিবারটি সর্বশান্ত ও ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে। এরপরও মেয়েকে সুস্থ করে তোলার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তারা।

অস্ত্রোপচারের কাটা ঘাগুলো যখন শুকিয়ে আসছিল, সোমাইয়া ও তার পরিবারের চোখে মুখে ছিল আনন্দের অশ্রু। ঠিক তখনই আবার পেটে ব্যথা শুরু হয়। আবার ধার দেনা করে দেখা করে চিকিৎসকের। আবার শুরু হল পরীক্ষা নিরীক্ষা, এবার যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানালেন, সোমাইয়া লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শ মতে দ্রুত শুরু করতে হবে চিকিৎসা।

সোমাইয়ার মা সানজিদা আক্তার জানান, মেয়ের যন্ত্রণায় কাতর হয়ে কান্নায় মাঝে মধ্যে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারি না। মা মেয়ে দু’জন একসঙ্গে কান্না করি। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না, তাই নিজের জীবনের বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে মেয়ের জীবন চেয়েছি।

সোমাইয়ার বাবা স্বপন মিয়ার মতে সামান্য বেতনে অন্যের দোকানে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে কোনো মতে সংসার চালাই। মেয়ের প্রথমবার চিকিৎসায় সর্বশান্ত হয়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। পূর্বের চিকিৎসার ঋণই শোধ দিতে পারিনি। নতুন করে চিকিৎসা ব্যয়ের যোগান দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে মৃত্যুকেই মেনে নিতে হবে। চোখের সামনে তরতাজা সাত বছরের একটি প্রাণ হেরে যাবে এটাও নিজের মনকে মানাতে পারছি না। এখন সৃষ্টিকর্তার দিকে চেয়ে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

শিমলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের মতে, সোমাইয়া আমাদের বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। অসুস্থ হওয়ার পর আমরা বিভিন্ন সময় তার পরিবারটির খোঁজখবর নিয়েছি। হতদরিদ্র বিধায় এখন বিনা চিকিৎসায় দিন কাটছে ৭ বছর বয়সী এই মেয়েটির। সকলের সহযোগিতায় মেয়েটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে হয়ত আবার ফিরে আসতে পারবে বিদ্যালয়ের আঙিনায়।